বর্তমান পৃথিবীতে থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী। অনেকে এই রোগের নাম শুনলেও বা আশেপাশে আক্রন্ত রোগী দেখলে কিংবা নিজের আক্রান্ত হলেও আমারা এই রোগ সম্পর্কে
থাইরয়েড হল আমাদের একটি গ্রন্থি যা আমাদের গলার সমনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে কিছু প্রয়াজনীয় হরমোন নি:সৃত হয়। এই হরমোন আমাদের বিপাকসহ আরও বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই রহমোন তৈরির জন্য এই গ্রন্থিটির প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়োডিনের দরকার হয়। উক্ত হরমোন আমাদের বিপাক ক্রিয়া সহ বিবিন্ন শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্মের সময় এই গ্রন্থি ঠিকভাবে তৈরি না হলে কিংবা প্রয়াজনমত হরমোন তৈরি করতে না পারলে বাচ্চাদের শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
আমাদের শরীরে যতটুকু হরমোন প্রয়াজন তার চেয়ে কম বা বেশি পরিমানে হরমোন তৈরি হলে হাইপোথাইরয়ডিজম হতে পারে। অবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে এই হরমোন উৎপান্ন হলে হাইপারথায়ডিজম হতে পারে। উভয়ই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি কর। এছাড়াও উক্ত গ্রন্থি থেকে আরও বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থি যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন উৎপাদন করে তখন ঘাইপোথাইরয়ডিজম হবার সম্ভবনা থাকে। যদিও আনেক সময় এর চোখে পড়ার মত লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে অনেকে বঝতেই পারেনা যে তিনি হাইপোথাইরয়ডিজম এ আক্রান্ত।
হাইপোথাইরয়াজিম হলে যে লক্ষণ দেখা যায় :
ক্লান্তি কিংবা অবসাদ অনুভব করা
কোন কিছুতে মোনযোগ দিতে পারে না।
শরীরের ত্বক শুস্ক হয়ে যায়
কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়।
অল্পতেই শীত শীত অনুভব করে।
পেশী বা বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা অনুভুত করে।
বিষন্নতা অনুভব করে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়।
শরীরের পালস রেট কম স্বাভাবিক এর তলনায় কম দেখা যায়।
থাইপারথাইরয়জিয়াম:
এ ক্ষেত্রে হাইপারথাইরয়াডিজম এর উল্টো ঘটনা ঘটে। থাইরয়েডে গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলানয় বেশি হরমোন উৎপাদন করলে হাপারথাইরয়াডিজম হবার সম্ভবানা থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিস্কের পিটুইটারি গ্রন্থি নামক এক গ্রন্থি। মস্তিস্কের এই পিটুইটারি গ্রন্থিকে আবার নিয়ন্ত্রণ
করে মস্তিস্কেও হাইপাথ্যালাম নামক অংশ এই হাইপাথালামাস থাইরয়েড রিলিজিং হরমোন (TRH) নামক এক হরমোন নির্গত করে। এই (TRH) হরমোন এর কাজ হল পিটুইটারি গ্রন্থিকে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TRH) নামক এক হরমোন নির্গত করার জন্য সংকেত পাঠানো। এই ঞজঐ হরমোন উক্ত গ্রন্থিকে থাইরয়েড হরমোন নির্গত রকার জন্য সংকেত পাঠায়। বোঝা গেল তাহলে এই হরমোন উৎপাদন এর জন্য শুধুমাত্র থাইরয়েড গ্রন্থি দায়ী নয়। হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্রন্থি এবং থাইরয়েড গ্রন্থি মিলিত প্রচেষ্টায় হরমোন নির্গমণ কাজ সম্পন্ন হয়।
এখন উক্ত তিনটি গ্রন্থির যে কোনো একটি বা একাধিক গ্রন্থি যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কাজ করে ফলে যতটুকু হরমোন দরকার তার চেয়ে বিশি পরিমাণ হরমোন উৎপন্ন হয়। আর তখনই বাঁধে সমস্যা। যেটা হাইপারথাইরয়াজিম নামে পরিচিত।
হাইপারথাইরয়াজিমম হলে যে লক্ষণ দেখা যায় :-
অতিরিক্ত ঘাম হয়
গরম সহ্য হয় না
খাবার হজমে সমস্যা
দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বেড়ে যা।
অস্থিরতা অনুভব করে।
শরীরের ওজন কমে যায়।
পালস রেট বেড়ে যায়।
অনিদ্রা দেখা যায়
চুল পাতলা এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়।
ত্বক পাতলা হয়ে যায়।
মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব অনিয়মিত কিংবা খুব অল্প পরিমাণে হয়।
বয়স্ক রোগীদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। শরীর খুব খারাপ অবস্থা হলে এবং হাইপারথাইরয়াডিজম এর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না হলে থাইরয়েড স্টর্ম (thyroid storm) হতে পারে। এতে রোগীর রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, জ্বর আসাতে পারে এবং হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার সম্ভবনা থাকে।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ :
হোমিওপ্যাথিক ঔষধে থাইরয়েড চিকিৎসায় থাইরয়েডিনাম ছাড়াও আয়োডিন, নেট্রাম মিউর, লাইকোপডিয়া, সাইলেসিয়া, ফিডোরিনাম, থুজা, মেডোরিনামসহ আরও অনেক ঔষধ লক্ষনের উপর আসতে পারে তবে কখনো রেজিষ্টর্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া ঠিক নয়। কারণ চিকিৎসক তার অভিজ্ঞতার ওপর ঔষধ নির্বাচন করে থাকেন যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঔষধে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ক্ষতি সম্ভবানা প্রবল থাকে।
থাইরয়েড এ সমস্যায় লক্ষণ বিত্তিক বেস্ট তিনটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের বর্ননা নীচে দেওয়া হলো :
Thyroidinum (থাইরয়েডিনাম)
১. দেহ ও মনের খর্বতা
২. অতিরিক্ত মোটা হতে থাকা বা ফুলতে থাকা কিম্বা অতিরিক্ত রক্তহীনতা ও শীর্ণতা।
৩. চর্মরোগ ও চুল উঠে যায়।
৪. উন্মাদ ভাব এবং অনিদ্রা।
Thyroidinum (থাইরয়েডিনাম) চরিত্রগত লক্ষণ :
১/ দেহ ও মনের খর্বতা। উন্মাদ ভাব এবং অনিদ্রা। অঘোরে ঘুম ও
অস্থিরতাসহ বিষাদ পর্যায়ক্রমে উপস্থিত, উত্তেজনা প্রবণ, অল্প প্রতিবাদে উত্তেজিত হয়, সামন্য কারণে চটে উঠে। উত্তেজিত উত্তেজনার পরেই মানসিক অবসাদ। হতবুদ্ধি বাব, রাত্রে বয়ের অভিব্যক্তি। অত্যন্ত ক্রিপন, স্বভাব, অল্পে অসন্তষ্ট, সর্বদাই বিষন্ন, সর্বদাই বিরক্ত, অকারণে কাঁদে, উলঙ্গ হয়, আত্নহত্যার ইচ্ছা ইত্যাদি লক্ষণ থাকে।
২/ অতিরিক্ত মোটা হতে থাকা কিংবা অতিরিক্ত রক্তহীনতা, প্রবল দুর্বলতা ও শীর্ণতা। রোগী সময় সময় সাংঘাতিক রুপে রক্তহীন হয়ে পড়ে ও শরীর কঙ্কালসার হয়।
৩/ চর্ম রোগ এবং মাথার চুল উঠিয়া যায়।
৪/ থাইরয়েড গ্রন্থিও দুর্বলতা থেকে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি দ্রব্য খাওয়ার প্রবৃত্তি জন্মে।
৫/ অত্যান্ত শীতার্ত।
৬/ মিষ্টি দ্রব্যে খাওয়ার আকাঙ্খা বেশী।
৭/ রক্তস্বল্পতা, র্শীণতা, পেশী দুর্বলতা, ঘাম, মাথা ধরা, মুখ ও অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ স্নায়বিক কম্পন, ঝিনঝিন করার অনুভুতি ও পক্ষঘাত সৃষ্টি করে। হৃৎক্রিয়া ঘাড়ে, চক্ষুগোলক বহির্নিগত ও প্রসারিত হ। শ্লৈম্মিক শোথ ও গলগন্ডসহ জড়বুদ্ধি রোগে ভাল কাজ করে।
৮/ স্ত্রীলোকের ঋতু এক বৎসর যাবৎ বন্ধ থাকলে ও এই ঔষধ সেবনে এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় ঋতু অবির্ভাব সম্ভব হইয়া থাকে। ঋতু¯্রাব বন্ধ হয়ে স্তনে দুগ্ধ ক্ষরণ বড়ে যায়। ঋতুস্রাব-পরিমানে প্রচুর, দীর্ঘস্থায়ী, অল্প বয়সে রজ:লোপ।
৯/ ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে স্তনে দুগ্ধ ক্ষরণ বেড়ে যায়।
১০/ ঠান্ডা পানির পিপাসা।
১১/ রাত্রে গাড়িতে বমি ভাব, ঠান্ডায় বৃদ্ধি।
১২/ ক্ষীণ, অবিরাম নাড়ী। সামনে ঝুকিলে বুক ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়, বুক ধড়ফড়ানি জন্য বিছানায় শুয়ে থাকতে পারে না। দ্রুত নাড়ী (ন্যাজ) বুকে উদ্বেগ বোধ যেন বুক সঙ্কচিত হয়ে পড়েছে। সামান্য পরিশ্রমে বুক ধড়ফড়ানি হৃদৎপিন্ডের ক্রিয়া দুর্বল, সেই সাথে আঙ্গলের অবশতা।
২/আয়োডিনাম :
ক্রিয়াস্থল : গ্লন্ড সমূহের উপর, স্ত্রীলোকদের স্তন, ডিম্বাকোষ, শ্লৈম্মিক ঝিল্লি, অন্ত্রর ক্রিয়া প্রকাশ করে।
আয়োডিনাম এর চরিত্রগত ও ধাতুগত লক্ষণ :
ক/ অত্যান্ত ক্ষুধা এবং প্রচুর আহার সত্বেও শীর্ণতা। খাওয়ার পর রোগী শান্তি পায়। খাইলে শান্তি পায় না খাইলে অশান্তি শুরু হয়।
খ/ দেহের শীর্ণতা, রোগী এত খায় তবুও শুকাইয়া যায়।
গ/ মেয়েদের স্থন দুটি শুকাইয়া ন্যাকড়ার মত হইয়া পড়ে।
ঘ/ থাইরয়েড, স্তন, যকৃত ডিম্বাধার, অন্ডকোষ, গ্রীবা, প্রষ্টেট গ্রন্থি বা গলা ফোলা, মুত্রশায় ফুলিয়া শক্ত হইয়া যায়।
ঙ/ রোগী গম কাতর তবে সব সময় ঠান্ডা চায়। ঠান্ডা বাতাস, ঠান্ডা পানী পান করতে চায়।
চ/ সামান্য কারণে ঠান্ডা বা সর্দি লেগে যায়।
ছ/ অত্যান্ত গরম প্রবণতা ও দুর্বলাতা।
জ/ স্নান করিতে আগ্রহী, অনেক সময় ২/৩ বারও স্নান করে।
ঝ/ রোগী সামন্য পরিশ্রমেই দুর্বল হইয়া পড়ে।
ঞ/ সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে গেলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাবে।
নেট্রাম মিউর
সারসংক্ষেপ : অলস্য, নম্রতা, ইন্দ্রিয় শক্তির স্নাহরতা, জৈব তরল পদার্থ নষ্ট হয়ে রক্ত শূন্যতা, ও শ্লেম্মাপ্রধান ধাতু ব্যক্তি। গলার মাঝে প্লাগ থাকার অনুভুতি। সকাল ১০টায়, পূর্বাহ্নে, দৈহিক পরিশ্রমে, ময়দা দ্বারা প্রাস্ত নায় বাড়ে। ঠান্ডা পানিতে গোসলে, শুয়ে থাকলে, ঘামের পরে, চাপে, দীর্ঘ শ্বাসে, ডান পাশে শয়নে ও কাজড় এঁটে পরলে কমে। ক্রোধ খিটখিটে, উৎকন্ঠা, প্রেমাতুর, নির্বাক দু:খ, বিষণতা, অত্যানুভুততিযুক্ত, উদাসীনতা, প্রলাপ, অসন্তষ্ট, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, কাঁদে, তেতো ও লবণ প্রিয়তা, প্রকাশ্য স্থানে প্রস্রাব করতে লজ্জাবোধ। পরনো আশাভঙ্গ হতে রোগের উৎপত্তি। দীর্ঘ সময় অবনত হয়ে থাকলে কোমর বা পিঠ ব্যথা করে। ঘামাবস্থায় ব্যথা ছাড়া অন্য সকল লক্ষণ উপশ্রম। শীর্ণতা, স্পপ্নসঞ্চরণ, রক্তস্বপ্লতা ও রক্তস্রাব ।
নেট্রাম মিউর এর বিশেষ লক্ষণ :
১/ পুরনো আশাভঙ্গ হতে রোগী উৎপত্তি।
২/ দীর্গ সময় অবনত হয়ে থাকলে কোমর বা পিঠ ব্যথা করে।
অনুভতি : (ক) জিবে চুল থাকার অনুভুতি।
(খ) উত্তাপর ঝলকাবোধ, ঘুমের সময় যেনো গরম পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে এ রুপ অনুভতি।
(গ) উত্তাপের অনুভুতি, জাগলে, রক্তবহা নালিগুলোতে টেটে লম্বা করার অনুভুতি।
সঠিক হোমিপ্যাথিক চিকিৎসা পেতে হলে জানতে হবে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ/নির্দেশনা ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।
খাইরয়েড রোগীরা কি কি খাবেন :
ফ্রেস ফল এবং শাকসজি, সামুদিক মাছ, প্রচুর পরিমাণে পানি, আদা, সবুজ সবজির রস, কাঁচা সবজি
যেমন : চমেটো, কাঁচা মরিচ, গাজর, শশা, খিরা, পেঁঁপে ইত্যাদি খাবার বেশি খাওয়া উচিত।
থাইরয়েড রোগীদের খাবার বাধা-নিষেধে:
বাঁধাকপি, পুঁইশাক, ব্রকোলি, প্রভৃতি খাদ্য বেশি পরিমাণে খেলে থাইরয়েডের মস্যা হতে পারে।
চিকিৎসার্থে যোগাযোগ করুন-
আরোগ্য হোমিও হল
প্রতিষ্ঠাতা : মৃত : ডা: আজিজুর রহমান
ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না)
বিএসএস, ডিএইচ এমএস (ঢাকা)
ডা: মোসা: অজিফা রহমান (ঝর্না)
ডিএইচ এমএস (ঢাকা)
রেজি নং- ১৬৯৪২
স্থাপিত -১৯৬২
মথুর ডাঙ্গা, সপুরা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
মোবাইল - ০১৭১৮১৬৮৯৫৪