একটু বড় বাচ্চাদের বিছানায় প্রস্রাব করা একটি রোগ। এই রোগটির নাম ইনুওরেসি'স। সাধারণত ৪-৫ বছরের ভেতর একটি শিশু পূর্ণভাবে টয়লেটে গিয়ে প্রস্রাব করতে শিখে। যদি ৫ বছরের পরেও কেউ বিছানায় প্রস্রাব করতে থাকে তাহলেই আমরা তাকে ‘ইনুওরেসিস বলবো। কেউ কেউ প্রথম থেকেই টয়লেটে গিয়ে প্রস্রাবের অভ্যাসটি রপ্ত করতে পারে না। অন্যরা আবার প্রথমে হয়ত অভ্যাসটি ঠিকই গড়ে তুলেছিল কিন্তু কয়েক বছর পর আবার কাপড়ে প্রস্রাব করা শুরু করে।
প্রথম ক্ষেত্রটিকে আমরা প্রাইমারি এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিকে সেকেন্ডারি ইনওরেসিস বলবো। সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই এ রোগে বেশি ভোগে। সম্ভবত এই কারণে যে, কোন কিছু শিক্ষণের (Learning) জন্য যে Conditioning-এর প্রয়োজন তা মেয়েদের ক্ষেত্রে সহজে ঘটে। সংখ্যা তথ্য সাধারণত কত শিশু এই রোগে ভোগে তার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য বাংলাদেশে নেই।
তবে বৃটেনে ৫ বছর পর্যন্ত ১০%, ৮ বছর পর্যন্ত ৪% এবং ১৪ বছর পর্যন্ত ১% শিশু এই রোগে ভুগে থাকে। বাস্তবে এর চেয়েও বেশিসংখ্যক শিশু এই রোগে ভুগে থাকে। কিন্তু তাদের বাপ-মা তা ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট করে না বলে রেকর্ডকৃত হচ্ছে না। এবং এ কারণেই যারা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য আসে তাদের বয়স প্রায়ই ৮/১০ কিংবা তারও বেশি হয়ে থাকে। যদি এই ন্যূনতম হিসেবেও ধরা হয় তাহলে বাংলাদেশে ৮ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ১৬-২০ লাখ শিশু এই রোগটিতে ভুগছে।
কারণসমূহ -- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন শারীরিক কারণ পাওয়া যায় না। তাই কারণসমূহকে দুইভাবে ভাগ করা যায়।
ক. শারীরিক কারণ
১. মূত্রনালীর সংক্রমণ,
২. প্রস্রাবের থলির ধারণ ক্ষমতা কম হওয়া কিংবা তার কার্যকারিতায় ত্রুটি থাকা
৩. স্নায়ু সিস্টেম-এর পূর্ণতা বা পরিপক্কতা (Maturation)দেরিতে হওয়া
৪. বংশগতির প্রভাব থাকা, কেননা দেখা গেছে এসব রোগীর ৭০% নিকটাত্মীয়েরও এই রোগ ছিল। তাছাড়া ডায়াবেটিস, মৃগীরোগ, স্পাইনা বাইফডা ইত্যাদি রোগের সঙ্গেও এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
খ. মানসিক ও পারিপার্শ্বিককারণ সমূহ -- এটার মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত কড়াকড়িভাবে টয়লেট ট্রেনিং করানো, শিশুর প্রতি বাপ-মা'র নেতিবাচক কিংবা উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গি, সংসারে অশান্তি ইত্যাদি
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
রাস-এরোমেটিক (Rhus – Aromatica):শিশুদের বিছানায় প্রস্রাবে রাস-এরোমেটিক(Rhus – Aromatica), দিনে ৩ বার ৫ ফোটা করে অব্যর্থ ফল দেয়।
(Cina) : ক্রিমিতে আক্রান্ত শিশুরা যদি ঘুমের ঘোরে বিছানায় অসারে প্রস্রাব করে এবং সর্বদা ফোটা ফোটা প্রস্রাব করে তাদের জন্য সিনা দেয়া প্রয়োজন।২০০ ও ওয়ান এম শক্তির ঔষধ সকাল বিকাল দুই মাত্র সেব্য। শিশু মাঝে মাঝেই নাক চুলকায় বা বালিশে নাক ঘষে। ঘুমের মধ্য দাঁত কড়কড় করে। অত্যধিক আবদারপরায়ণ। অনবরত এটি ওটি চায়। দিলেও সন্তুষ্ট হয় না। আবার আর কিছু খায়। অত্যধিক ক্ষুধা ও খায়। জিহ্বা পরিষ্কার এমন শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে সিনা (Cina) 2০০, 1০০০ প্রয়ােজ্য।
(Causticum) : শিশু প্রথম ঘুমেই বিছানায় প্রস্রাব করে কষ্টিকাম তাদের পরম বন্ধু। শীতকালে বিছানায় প্রস্রাবের প্রবনতা বেশি হলে কষ্টিকাম উত্তম ঔষধ। বিছানায় প্র্রস্রাবের চিকিৎসার কথা মনে হলেই এই ঔষধের নাম স্মরন করা হয়। ৩০ বা ২০০ শক্তির ঔষধ দিনে দুই মাত্রা সেবন করতে হয়।
ঘুমের মধ্য অসাড়ে প্রস্রাব করে, কিছুই জানতে পারে না। শিশু / বাচ্চা খুব নম্র। তিরঙ্কার করলে কেঁদে ফেলে। হাচি কাশির সময় ২/১ ফোটা প্রস্রাব বের হওয়ার অভ্যাসে কষ্টিকাম (Causticum) 200, 1000.
(Kreosote): যেসব বাচ্চারা মনে করে যে সে বাহিরে প্রস্রাব করছে কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেথে যে নিজের বিছানায়ই প্রস্রাব করেছে, সহজে জাগানো যায় না, বিছানায় প্রস্রাব করার পরেও বাচ্চা ঘুম থেকে জাগ্রত হয় না, প্রস্রাবে ভিজেই ঘুমাতে থাকে।
দিনই জোর করে হলেও প্রস্রাব করিয়ে শোয়ানো তবুও শয়নের পর পরই প্রস্রাব করে ফেলে। বিছানায় প্রস্রাব করে অপরাধ বোধ করে, শিশু ভয়ানক শীতকাতর এরূপ লক্ষনের রোগীর জন্য ক্রিয়োজোট (Kreosote)প্রয়োজন । (Kreosote) c«‡qvRb | 30/200 শক্তির ঔষধ দিনে দুই মাত্রা সেব্য।
সিপিয়া (Sepia) : যে বাচ্চা প্রথম ঘুমেই বিছানায় প্রস্রাব করে এবং প্রস্রাবে দুর্ঘন্ধ থাকে তার জন্য সিপিয়া পরম বন্ধু। বিশেষ করে মেয়েদের বিছানায় প্রস্রাবের সমস্যায় সিপিয়া (Sepia) : ভালো কাজ করে। 3০ বা 2০০ শক্তির ঔষধ দিনে দুই মাত্রা সেব্য।
(Sulphur ) : সোরার প্রবনতা বা সুপ্ত সোরার বহিঃপ্রকাশ, গোসলে অনিহা, মিস্টি ও মশলা জাতীয় খাবার পছন্দ , যে সকল বাচ্চারা অতিরিক্ত দুষ্ট, বদমেজাজি এবং রাতের দ্বিতীয়ার্ধে বিছানায় প্রস্রাব করেন তাদের ক্ষেত্রে সালফার (Sulphur )কার্যকরী।
মেডোরিনাম Medorrhinum): সাইকোসিস ধাতুর রোগী এবং সুনির্বাচিত ঔষধ ব্যর্থ হলে মেডোরিনাম কার্যকরী, মেডোরিনামের শিশুরা দিনের বেলায় ঘুমালেও প্রস্রাব করে দেয়। রাত্রে বিছানায় প্রস্রাব করে। প্রস্রাব খুব দুর্গন্ধযুক্ত। রক্তশুন্য, শুষ্ক, শীর্ণ দূর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন, খর্বাকৃতি ও স্থূলবুদ্ধি বিশিষ্ট শিশু। সে বাতাস চায় কিন্তু সে ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না।
গনােরিয়া চাপা পড়া পিতামাতার সন্তানদের বিছানায় প্রস্রাব করার মেডোরিনাম Medorrhinum): উৎকৃষ্ট ঔষধ । শিশুর স্মরণশক্তি একবারেই কম। পড়ে মনে রাখতে পারে না। অংক মােটেই বুঝে না। প্রস্রাবে খুব দুর্গন্ধ। ক্ষুধা ও পিপাসা বেশী। দেহ শীর্ণ ও বামন।
সিফিলিনাম (Syphilinum) :সিফিলিটিক মায়াজমের শিশুরা রাত্রে ঘুমানোর সাথে সাথেই প্রস্রাব করে দেয়, এবং রাত্রের মধ্যে কয়েকবার বিছানায় প্রস্রাব করে, মুখে লালা জমার প্রবনতা এবং মুখে দুর্গন্ধ হয়।
স্যানিকিউলা (Sanicula) : দিনের বেলায় যে সমস্ত শিশু বাচ্চারা কাপড় খুলতে খুলতে বা বিছানা হতে নামতে নামতেই প্রস্রাব করে ফেলে সেই সমস্ত শিশুদের রাত্রে বিছানায় প্রস্রাব করার ক্ষেত্রে ব্যবহার্য্য। প্রস্রাব করা স্থানে লালাভ দাগ পড়ে। তার মলের এক অদ্ভুত লক্ষণ এই যে, মল তার চার কোনা বিশিষ্ট হয়। শিশুর ঘাড়ে অত্যধিক ঘাম হয় এরকম লক্ষন ও বৈশিষ্ট্যে স্যানিকিউলা (Sanicula) : 3০, 2০০, 1০০০
সার্সাপেরিলা (Sarsaparilla): যে সমস্ত শিশু বাচ্চারা জাগ্রত অবস্থায় না দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে পারে না, বসে প্রস্রাব করতে গেলে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব নির্গত হয়, তাদের বিছানায় প্রস্রাব করার ইহা ভাল ঔষধ। জাগ্রত অবস্থার না দাঁড়ালে ভালভাবে প্রস্রাব না হওয়া অথচ শয়ন ও নিদ্রাঘােরে অসাড়ে প্রস্রাব হওয়া এর বিশেষত্ব। প্রস্রাব শেষ হওয়ায় প্রাক্কালে ভয়ানক যাতনা ও বিদ্যুৎ প্রবাহের ন্যায় শরীর ঝাকি দেয়াও এর আর এক বিশেষত্ব। এরূপ লক্ষন বৈশিষ্ট্যে সার্সাপেরিলা (Sarsaparilla): 3০, 2০০, 1০০০
অ্যাসিড ফস (Acid Phos) : স্নায়ুতন্ত্রের কারণে মানসিক ও শারীরিক অক্ষমতা (রাতে বিছানায় মূত্রত্যাগ) নিয়ন্ত্রণ করতে উপযোগী।
ইকুইজেটাম (Equisetum) : কোন ঔষধ কাজ না করলে ইকুইজেটাম (ঊয়ঁরংবঃঁস) ৬ শক্তি দিনে তিন বার সেব্য।
ক্রিমি থাকিলে সিনা (Cina Maritima) ২০০ বা সােমরাজ Q, ৫ ফোটা করিয়া দিনে ৪বার কিছুদিন সেবনীয়। - ডাঃ প্রস্রাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
ব্লুমিয়া ওডাে (Blumea Odorata) 2x (ডাঃ কাসিং) দিনে ৩ বার ৩ ফোটা করে।
খুজা (Thuja Occidentalis) :আচিলযুক্ত বা লাল তিলওয়ালা শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা ব্যাধিতে খুজা (Thuja Occidentalis) :2০০, 1০০০।
ব্যাসিলিনাম (Bacillinum): শিশু বা বালকদের শয্যামূত্রের ক্ষেত্রে ভালাে ওষুধ ব্যাসিলিনাম (Bacillinum)। - ডাঃ ফুবিস্টার (Foubister)
শিশুর বিছানায় প্রস্রাবের সমস্যায় বায়োকেমিক চিকিৎসা :
নেট্রাম ফস ( Natrum Phos): ক্রিমিতে আক্রান্ত শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করলে Natrum Pho– 3X ১/৪ বড়ি দিনে তিন বার বয়স অনুসারে সেব্য
নেট্রাম সালফ ( Natrum Sulph): শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করলে নেট্রাম সালফ – 6x; ১/৪ বড়ি দিনে তিন বার বয়স অনুসারে সেব্য
ক্যালকেরিয়া ফস (Calcarea phos): রক্ত শুন্য দুর্বল পুষ্টিহীন শিশুর বিছানায় প্রস্রাব বন্ধের জন্য (Calcarea phos)- 6x ev 12x, ১ /৪ বড়ি দিনে তিন বার বয়স অনুসারে সেব্য
কেলি ফস (Kali phos): স্নায়ুবিক দুর্বল শিশুর জন্য কেলি ফস 3xবা 6x , ১ /৪ বড়ি দিনে তিন বার বয়স অনুসারে সেব্য।
চিকিৎসার্থে যোগাযোগ করুন-
আরোগ্য হোমিও হল
প্রতিষ্ঠাতা : মৃত : ডা: আজিজুর রহমান
ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না)
বিএসএস, ডিএইচ এমএস (ঢাকা)
ডা: মোসা: অজিফা রহমান (ঝর্না)
ডিএইচ এমএস (ঢাকা)
রেজি নং- ১৬৯৪২
স্থাপিত -১৯৬২
মথুর ডাঙ্গা, সপুরা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
মোবাইল - ০১৭১৮১৬৮৯৫৪
arh091083@gmail.com
hafizurrahman2061980@gmail.com
0 coment rios: